মোদীর 'রাম প্রতিজ্ঞা'!
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ৩০ ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রামের শহর অযোধ্যায় ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন অযোধ্যায় উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দিচ্ছিলেন, তখন তিনি শুধু তার গ্যারান্টিই পূরণ করছিলেন না বরং এক প্রতিজ্ঞা পূরণের সাক্ষ্যও দিচ্ছিলেন।
এই প্রতিজ্ঞাটি ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন প্রাক্তন প্রচারক এবং বিজেপি সংগঠনের একজন সাধারণ সম্পাদক নিয়েছিলেন এবং অযোধ্যা নিজেই এই প্রতিজ্ঞার সাক্ষী। এই প্রতিজ্ঞা রাষ্ট্রের অখণ্ডতার সংকল্পে বের হওয়া একজন রাম ভক্ত নিয়েছিলেন। এই প্রতিজ্ঞা সরুর তীরে দাঁড়িয়ে মুরলি মনোহর যোশীর একতা যাত্রার সমন্বয়ক নিয়েছিলেন আর সেই প্রতিজ্ঞা নেওয়া ব্যক্তির নাম নরেন্দ্র মোদী।
অযোধ্যার সাংবাদিক মহেন্দ্র ত্রিপাঠি এবিপি নিউজকে জানিয়েছেন যে, বিজেপির একতা যাত্রা, যা ১১ ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে কন্যাকুমারী থেকে শুরু হয়েছিল, ১৪ জানুয়ারী ১৯৯২-এ অযোধ্যায় পৌঁছেছিল। এই তারিখে অযোধ্যায় ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ সময় স্লোগান ওঠে। 'দেশের তিন ধরোহর (ঐতিহ্য) 'অটল-আডবাণী-মুরলি মনোহর।' এই সময়টা ছিল যখন উত্তরপ্রদেশে বিজেপি কার্যকর্তাদের জন্য নরেন্দ্র মোদীর নাম ছিল অ-শোনা এবং মুখ অ-দেখা।
সেই সময় মুরলি মনোহর জোশীকে দেখতে প্রচুর ভিড় জমেছিল। ভিড়ে ধস্তাধস্তির মধ্যে, অযোধ্যার এক সাংবাদিক জোশীর ছবি তোলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীও সেই ছবিতে আসেন। মোদী জানতেন, রামভক্তদের সংগ্রাম কী আর অযোধ্যার বেদনা কী?
সেই সময় তাঁবুতে রামলালাকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মোদী এবং রামলালার দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছিলেন। যখন মহেন্দ্র ত্রিপাঠী ফটোগ্রাফার জিজ্ঞেস করেন, 'আপনি কি ভাবছেন?' প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে কিছু বলেননি। এর পরে তিনি মোদীকে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনি আবার কখন আসবেন?' যার জবাবে তিনি বলেছিলেন, 'আমি তখন আসব, যখন এখানে রাম মন্দির নির্মাণ হয়ে যাবে।'
মহেন্দ্র ত্রিপাঠী কে?
মহেন্দ্র ত্রিপাঠী একজন ফটো-সাংবাদিক এবং তাঁর কাছে সেই সময়ের রাম মন্দিরের ছবি থাকত। রামমন্দির আন্দোলনে গুলি চালানোর ঘটনায় সাক্ষ্যই হোক বা বাবরি ধ্বংস সংক্রান্ত গোপন তথ্য, নব্বইয়ের দশক থেকে ফৈজাবাদ থেকে অযোধ্যা যাত্রার প্রতিটি বড় ঘটনার সাক্ষী থাকা মহেন্দ্র ত্রিপাঠিই সেই ব্যক্তি, যিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর রাম প্রতিজ্ঞার সাক্ষী।
একতা যাত্রার আহ্বায়ক হওয়া থেকে শুরু করে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং তারপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত, প্রধানমন্ত্রী ২২ বছরের সফর পূর্ণ করেছেন। এই সময় তিনি মহেন্দ্র ত্রিপাঠীর সামনে নেওয়া রাম প্রতিজ্ঞা প্রতি মুহূর্তে পালন করছিলেন। এই সময়ের মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বেশ কয়েকবার অযোধ্যায় গিয়েছিলেন এবং রাম মন্দিরের কাছেও পৌঁছেছিলেন, কিন্তু রামলালার দর্শন করেননি।
এমনকি ৫'মে, ২০১৪-তে অযোধ্যা জেলার রাজকীয় ইন্টার কলেজ মাঠে মোদীর জনসভা অনুষ্ঠিত হলেও তিনি রাম জন্মভূমিতে যাননি। এর পরে, আবার ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, প্রধানমন্ত্রী মোদী অযোধ্যা সংলগ্ন বারাবাঙ্কি জেলায় একটি জনসভা করেছিলেন, কিন্তু অযোধ্যায় যাননি। এর পরে, তিনি ১ মে ২০১৯-এ অযোধ্যা জেলার রামপুর মায়ায় একটি সমাবেশ করেছিলেন, তবে এবারও তিনি অযোধ্যা থেকে দূরেই ছিলেন।
২০১৯ সালের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর, নরেন্দ্র মোদী টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাস পরে, ৯ নভেম্বর ২০১৯-এ রাম মন্দির নিয়ে সিদ্ধান্ত আসে। সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু পক্ষগুলোর পক্ষে রায় দিলে রাম মন্দির নির্মাণের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদীও দেশের সংসদে এটি উল্লেখ করেন এবং নিজেই ঘোষণা করেন যে, সরকার রাম মন্দির নির্মাণে আরেকটি পদক্ষেপ করেছে।
এর পরে, যখন রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়, তখন রাম জন্মভূমিতে একটি বিশাল মন্দির তৈরির পথ পরিষ্কার হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রতিজ্ঞা পূরণের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। ৬ মাস পর, প্রধানমন্ত্রী মোদী আবার অযোধ্যায় পৌঁছান এবং ৫ আগস্ট ২০২০-তে তিনি ২৯ বছর পর প্রথমবার রামলালার দর্শন করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী রাম মন্দিরের শিলান্যাস করেন এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মন্দির নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে কতটা উৎসাহী ছিলেন তা এই ঘটনা থেকেই অনুমান করা যায় যে, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর তিনি মন্দির প্রাঙ্গণে ঘুরে-ঘুরে, ইঞ্চি-ইঞ্চির স্থিতি সম্পর্কে তথ্য নিচ্ছিলেন।
আজ যখন নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যার রামনগরীকে বিকাশের বিশাল উপহার দিচ্ছিলেন এবং রামভক্তদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখনও তিনি তাঁর রাম প্রতিজ্ঞা নিয়ে একটি কথাও বলেননি, কারণ এটি ছিল ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে গোপন সংলাপ।
No comments:
Post a Comment