প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ৩০ সেপ্টেম্বর: প্রবল বৃষ্টির জেরে বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল। দেশের পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের বড় অংশে বন্যার জল প্রবেশ করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আধিকারিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে এখন পর্যন্ত ১৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আর ৪২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। শুক্রবার ও শনিবার মুষলধারে বৃষ্টির পর কাঠমান্ডুর প্রধান নদী বাগমতি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিনের জন্য সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঋষিরাম পোখারেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বন্যা সংক্রান্ত ঘটনায় ১১১ জন আহত হয়েছেন। পোখারেল বলেন, 'সব নিরাপত্তা সংস্থার সহায়তায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।' তিনি বলেন, 'নেপালের সেনাবাহিনী সারা দেশে আটকা পড়া ১৬২ জনকে এয়ারলিফট করেছে। এছাড়া নেপালি সেনাবাহিনী, নেপাল পুলিশ ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর জওয়ানরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৪ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছেন। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।'
ঋষিরাম পোখরেল বলেন, ভূমিধস ও জমা জলের কারণে জাতীয় সড়কগুলো ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে শত শত মানুষ এখানে আটকা পড়েছেন। অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও, ত্রিভুবন হাইওয়েতে যাতায়াত আবার শুরু হয়েছে, কাঠমান্ডুকে অন্যান্য জেলার সাথে সংযোগকারী প্রধান স্থলপথ এটি। আধিকারিকদের মতে, বন্যার কারণে নেপালে অন্তত ৩২২টি বাড়ি ও ১৬টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নেপালে ভয়াবহ বন্যা তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, তাঁরা কাঠমান্ডু উপত্যকায় ৪০-৪৫ বছরে এত ভয়াবহ বন্যা এবং জল দেখেনি। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অরুণ ভক্ত শ্রেষ্ঠা বলেন, 'কাঠমান্ডুতে আমি আগে কখনও এমন বন্যা দেখিনি'।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এশিয়া জুড়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময় পরিবর্তিত হচ্ছে, তবে বন্যার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি বড় কারণ হল অপরিকল্পিত নির্মাণের মতো মানুষের কর্মকাণ্ড। বন্যা ও ভূমিধসের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বহু মহাসড়ক ও রাস্তাঘাট ব্যাহত হয়েছে, শত শত বাড়িঘর ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শত শত পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
শনিবার আইসিএমওডি-এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, শুক্র ও শনিবার পূর্ব ও মধ্য নেপালে প্রবল বৃষ্টিপাতের পর কাঠমান্ডুর প্রধান নদী বাগমতি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং মৌসুমী বায়ুর কারণে শনিবার অসাধারণ ভাবে মুষলধারায় বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আধিকারিকরা জানান, শনিবার কাঠমান্ডুর সীমান্তবর্তী ধাদিং জেলায় ভূমিধসে একটি বাস চাপা পড়ে অন্তত ১৯ জন মারা গেছে। ভক্তপুর শহরে ভূমিধসে একটি বাড়ি ধসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মাকওয়ানপুরে 'অল ইন্ডিয়া নেপাল অ্যাসোসিয়েশন' পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভূমিধসের ঘটনায় ছয় ফুটবল খেলোয়াড় প্রাণ হারিয়েছেন এবং অন্যরা বন্যার জলে ভেসে গেছে। এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস থাকলেও রবিবার কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেছে।
No comments:
Post a Comment