জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আপনি কি জানেন প্রতি বছর প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষ কিডনি রোগে মারা যায়।
শরীরের রক্তের একটি বড় অংশ কিডনি দিয়ে যায়। কিডনিতে উপস্থিত লক্ষাধিক নেফ্রন টিউব রক্তকে ফিল্টার করে এবং বিশুদ্ধ করে। তারা প্রস্রাবের আকারে রক্তের অশুদ্ধ অংশ আলাদা করে। কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা যায় না এবং এটি এতটাই বিপজ্জনক যে এটি কিডনি ব্যর্থতায় রূপ নেয়।
স্থূলতার সবচেয়ে বড় কারণ
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১০% তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রভাবিত করে। এই রোগে কিডনির ব্যাপক ক্ষতি হয়, যার কারণে অনেক সময় রোগীকে জীবন হারাতে হয় বা সারাজীবন একটি কিডনি নিয়ে কাজ করতে হয়। প্যান ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ৫০ শতাংশেরও বেশি কিডনি রোগের কারণ হিসাবে দেখা গেছে স্থূলতা। অনেকের শরীর মোটা না হলেও পেট বেরোচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় কারণ পেটের স্থূলতা। আসলে কিডনি রোগের লক্ষণ দেখা দেয় যখন ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য একে নীরব ঘাতকও বলা হয়।
ডায়াবেটিস ও রক্তচাপও কারণ
ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বিকল হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর কিডনি ফেইলিওর হয়। এই রোগীদের মধ্যে ৫০ শতাংশই এমন যাদের এই রোগটি খুব দেরিতে ধরা পড়ে এবং তারপর তাদের ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ কোনো চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। চূড়ান্ত পর্যায়ে উপরোক্ত রোগের চিকিৎসা শুধুমাত্র ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেই সম্ভব।
প্রাথমিক লক্ষণ:
শরীরে ফোলাভাব।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
প্রস্রাবে প্রোটিন বা রক্ত। ঈর্ষা অনুভব করছি।
ঘন মূত্রত্যাগ।
ক্ষুধা হ্রাস এবং বমি বমি ভাব।
শরীরে রক্তের অভাব ও রক্তচাপ বেড়ে যায়।
কিডনি প্রতিস্থাপন:
কিডনি প্রতিস্থাপনে, দাতা বা দাতার প্রদত্ত একটি কিডনি রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর আর ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয় না। আজকাল কিডনি প্রতিস্থাপনের ফলাফল খুব ভালো হয়েছে। প্লাজমা এক্সচেঞ্জ, রিতুক্সিমাব, আইজিআইজি ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে অন্য ব্লাড গ্রুপের দাতার কিডনিও রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। একে বলা হয় ABO ইনকমপ্যাটিবল ট্রান্সপ্লান্ট। কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীরা যদি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করেন, তাহলে তারা সময়মতো ওষুধ খাওয়ার মতো ভালো জীবনযাপন করতে পারবেন। সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে, সময়ে সময়ে পরীক্ষা করা চালিয়ে যান। এভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েও রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

No comments:
Post a Comment