রাজ্যে ক্রমশই দাপট বাড়ছে অ্যাডিনোভাইরাসের গত ২৪ ঘন্টায় কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের ক্রমাগত মৃত্যুর কারণে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমানসে। রাজ্য সরকার অ্যাডিনোভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরামর্শ এবং হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্যাড্রিয়োটিক বিভাগ ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা এবং হেল্পলাইন নম্বর জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও শিশু মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। অনেক হাসপাতালে শিশু বিভাগ সম্পূর্ণ পূর্ণ। শিশুদের অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকালের মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই মারা গিয়েছে আরও দুই শিশু। এছাড়া জেলায় দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ৭ মাস বয়সী একটি শিশু রয়েছে। তার নাম জিশান টুডু। সে হামিদপুরের বাসিন্দা।
১৯ ফেব্রুয়ারি, জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাকে ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছিল। বুধবার সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণে ভুগছিল শিশুটি, জন্ম থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল। হাসপাতাল বলছে, অ্যাডিনোভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া সেরে গেলেও হার্টের সমস্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে।
দ্বিতীয় শিশুর বয়স ২২ দিন, বাগনান হাওড়ার বাসিন্দা। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে ভর্তি করা হয়। উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়। অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। মঙ্গলবার গভীর রাতে মারা যান।
বুধবার বিসি রায় হাসপাতালে আরও ২ শিশু মারা যায়। চার বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, সে গোবরডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। জানা গেছে, শিশুটি কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। পরে তার শ্বাসকষ্ট হয়। প্রথমে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটিকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। বুধবার ভোর ৪.৫৫ মিনিট নাগাদ শিশুটির মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে রবিবার বারাসতের নবপল্লির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক মহিলা সন্তানের জন্ম দেন। বারাসত হাসপাতালে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেন। ফুলবাগান শিশু হাসপাতালে তাকে রেফার করা হয়। শিশুটির তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিল। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। জ্বর ও শ্বাসকষ্টে বুধবার মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে সে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ৩ মাস থেকে ২বছর বয়সী শিশুরা অ্যাডিনোভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে আরও একটি বৈঠক হয়েছে। ইতিমধ্যেই নবান্নে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা সতর্কতার মতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট খোলা এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আগামী ৭ দিন মনিটরিং করার পর সতর্কতার কথা ভাববে সরকার। তবে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখনই কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।

No comments:
Post a Comment