ইতিহাসে প্রচলিত আজব সব ফ্যাশন - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, 1 August 2023

ইতিহাসে প্রচলিত আজব সব ফ্যাশন

 


ইতিহাসে প্রচলিত আজব সব ফ্যাশন 



প্রেসকার্ড নিউজ লাইফস্টাইল ডেস্ক, ০১ আগস্ট: সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের পোষাক আষাকের ডিজাইন পাল্টে যাচ্ছে। না জানি এখনও পর্যন্ত কত ধরনের ফ্যাশন এল আর গেল। কিন্তু মানুষ সব সময় চেষ্ঠা করে সে সবার থেকে সুন্দর আর আলাদাভাবে নিজেকে আর কিভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে। তবে ইতিহাসে এমন অনেক ফ্যাশন ছিল, যেগুলো বর্তমানে দাঁড়িয়ে খুবই হাস্যকর মনে হবে। তাছাড়া এর মধ্যে অনেকগুলো ফ্যাশন ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু তাও এগুলো ছাড়া শেষ সময় লোকজন নিজেদের স্টাইলিশ ভাবতে পারত না। জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু আজব ফ্যাশন সম্পর্কে -


১. ক্রিনোলাইন: ক্রিনোলাইন নামের এই ড্রেসটিতে ব্যবহার করা হত বড় বড় লোহার রড। রডের ব্যবহার করে একটি খাচার রিং তৈরি করা হত, যার ফলে ড্রেসটির ওজন অনেক বেশী হত। ১৯ শতকের মহিলারা এই ভারী ভারী রডের তৈরি খাঁচার মতো দেখতে রিংগুলি তাদের লঙ্গ স্কার্টের নীচে পড়তেন, যাতে স্কার্ট গুলো দেখতে অনেকটা ফোলা লাগে। সেই সময় ক্রিনোলাইন অনেক আকর্ষণীয় পোষাক হিসাবে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এর ওজনের জন্য এই ড্রেস বহন করা খুবই মুশকিল ছিল আর বিপজ্জনকও ছিল। কারণ কোনো ভাবে যদি এই ড্রেস পড়ে কেউ হোঁচট খেয়ে পড়ে যেত, তাহলে তার উঠে দাঁড়ানো মুশকিল ছিল। 


২. ক্রসেটস: ক্রসেটস বর্তমান যুগেও বেশ প্রচলিত রয়েছে। এই ফ্যাশন আমরা এখনও দেখতে পাই। সেকালে এই ক্রসেটস মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও ব্যবহার করত। ক্রসেটস পড়লে মেয়েদের পেটের দিকটা অনেকটা সরু হয়ে যায়, যার ফলে তাদের শরীরের গঠন বেশ আকর্ষণীয় লাগত। কিন্তু এই ড্রেস পড়া অনেকটা বিপজ্জনক। এই ড্রেসটি পড়ার জন্য এর ফিতে খুব টাইট করে বাধতে হয়, যার ফলে অনেক সময় নিশ্বাস নিতে অসুবিধে হয়। এমনকি দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। 


৩. ফুট বাইন্ডিং: আমরা সবাই সিনেমা থেকে শুরু করে রিয়েল লাইফে মেয়েদের হাই হিলস পড়তে দেখি। কিন্তু হিল জুতো পড়লে পা অনেকটাই ভাঁজ হয়ে যায়, যার ফলে খুব যন্ত্রণাও হয়। আর বয়স বাড়লে হাঁটুর সমস্যাও দেখা যায়। যদিও আমরা ভাবতে পারি এটা কি এমন কঠিন কাজ! কিন্তু চায়নার ফুট বাইন্ডিং ফ্যাশনের ব্যাপারে জানলে আপনি অবাক হবেন। চায়নাতে ফুট বাইন্ডিং একটি এমন ফ্যাশন ছিল যে, ছোট থেকেই মেয়েরা তাদের পা বেঁধে রাখত, যার ফলে তাদের পা ৩ ইঞ্চির বেশী লম্বা হত না। চাইনিজ লোকেরা এই ট্রেডিশনকে সুন্দর ও রাজকীয় বলে মনে করতেন। আর যাদের পা বড় হত তাদের নীচু জাতির বলে মনে করা হত। কিন্তু এই ভয়ংকর ফ্যাশনের পরিণতি খুবই খারাপ ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে বেধে রাখার ফলে মহিলাদের পায়ের হাড় বেঁকে যেত। তাই তারা একটু বয়স হলে পঙ্গু হয়ে যেত এবং হাঁটা চলা করতে পারত না। ১৯১১ সালে এই ফ্যাশনকে চায়না ব্যান্ড করে দেয়। 


৪. নেক রিংস: আপনারা হয় তো অনেকেই জানেন যে, বার্মার মহিলাদের জিরাফ ওম্যান বলা হয়। তারা এখনও গলায় রিং পড়ে থাকেন। আর এই কারনে তাদের গলা বেশ লম্বা হয়ে যায়। এদের এই লম্বা গলাকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু শুরুর দিকে এই ট্রেডিশনকে মহিলারা তাদের সেল্ফ ডিফেস্নের জন্য ব্যবহার করতেন। যাতে তাদের গলায় বাঘ বা সিংহ কামড়াতে না পারে। কিন্তু পরে এই ফ্যাশন এক ট্রেডিশনের রূপ নেয়। এই ফ্যাশনের জন্য মহিলাদের গলায় বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। 


৫. টুথ ব্লাকেনিং: ১৯ শতাব্দীতে জাপানে দাঁত কালার করার ট্রেডিশন প্রচণ্ড ভাবে প্রচলিত ছিল। তখন মহিলারা আয়রন ও কালো রং দিয়ে বানানো বিভিন্ন ড্রিংক খেত, যার ফলে তাদের দাঁত কালো হয়ে যেত। সেই সময় এই কালো দাঁতকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে মনে করা হত। কিন্তু ১৮৭০ সালে এই ফ্যাশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। 


৬. হভেল স্কার্ট: ২০ শতাব্দীর শুরুর দিকে ড্রেস ডিজাইনার পল পাইরট প্রথম বার হভেল স্কার্ট বানিয়েছিলেন। এই স্কার্ট অনেক লম্বা ও টাইট হত, যার ফলে এই স্কার্ট পড়ে মহিলারা তাড়াতাড়ি চলতে পারত না। কারণ পড়ে যাওয়ার ভয় থাকত। 


৭. চপিনিস: চপিনিস এমন এক ধরণের জুতো ছিল, যার সোল অনেক উঁচু হত। এই জুতো পড়ে ব্যালেন্স করা খুব কঠিন ছিল। ১৫ থেকে ১৬ শতাব্দী পর্যন্ত এই জুতো খুবই প্রচলিত ছিল। মহিলাদের এই জুতো পড়ার কারণ হল তাদের লঙ্গ ড্রেস, যাতে মাটিতে না লাগে। তাছাড়া সেই সময় মনে করা হত, যে মহিলার হিল যত বড় হবে তার প্রভাবও তত বেশী। এই জুতো এতটাই লম্বা হত, যার ফলে মহিলারা তাদের সাথে করে একজন পরিচারক নিয়ে হাঁটতেন, তাদের হাঁটার সুবিধার জন্য। 


৮. আর্সেনিক ড্রেস: ১৯ শতকের শুরুতে মর্টাল গ্রিন কালারের এই ড্রেস খুব প্রচলিত ছিল। কিন্তু এ ড্রেস এতটা ভয়ংকর ছিল যে, এই ড্রেস পড়ে কারও মৃত্যু হয়ে যেতে পারত। কারণ সেই সময় এই জামা কাপড়ে যে রঙের ব্যবহার করা হত, তার সাথে আর্সেনিক নামের একটি বিষাক্ত পদার্থের ব্যবহার করা হত। এই বিষাক্ত পদার্থের জন্য অনেক সময় ড্রেস যে বানাতেন এবং এই ড্রেসটি যে পড়তেন, তাঁর মৃত্যু হয়ে যেত। আর্সেনিক‌ প্যারিস গ্ৰিন নামেও পরিচিত । আর্সেনিকের ভয়ানক রি-অ্যাকশনের ফলে ডাক্তাররা এই ড্রেস ব্যান করিয়ে দেয়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad