প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,২ ডিসেম্বর: শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল থাকে।সময়ের সাথে সাথে ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে।এই কারণেই আবহাওয়া পরিবর্তন হলে বা সংক্রমণের কারণে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।এইভাবে শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।নিউমোনিয়ায় শিশুর বারবার জ্বর হয়।
অনেক ধরনের নিউমোনিয়া আছে।মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়াও এর অন্তর্ভুক্ত।এটি এক ধরনের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ,যা বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।এই সংক্রমণটি প্রধানত শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং শিশুদের 'ওয়াকিং নিউমোনিয়া' বা 'হালকা নিউমোনিয়া'ও বলা হয়। মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।এটি বিশেষ করে স্কুল বা জনাকীর্ণ জায়গায় ঘটে।আজ শিশুদের মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া সংক্রমণের লক্ষণ এবং কীভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা হয় সে সম্পর্কে ডঃ দীপিকা রুস্তগী, সিনিয়র কনসালটেন্ট, পেডিয়াট্রিক্স,যশোদা হাসপাতাল-এর কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক।
শিশুদের মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ার লক্ষণ -
শিশুদের মধ্যে মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া সংক্রমণ ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় এবং লক্ষণগুলি কখনও কখনও সর্দি বা ফ্লু-র মতো হতে পারে।
জ্বর -
এই সংক্রমণের কারণে হালকা থেকে মাঝারি জ্বর হতে পারে, যা প্রায় ১০১-১০২°F এ পৌঁছাতে পারে।শিশুরা জ্বরের সাথে দুর্বলতা ও ক্লান্তিও অনুভব করতে পারে।
অবিরাম কাশি -
শিশুদের মধ্যে মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল শুকনো কাশি।এই কাশি কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে এবং ধীরে ধীরে তীব্র হতে পারে।শিশুরা গলায় খুসখুস এবং ব্যথা অনুভব করতে পারে।গলায় জ্বালাপোড়াও হতে পারে।যার কারণে তাদের কথা বলতে এবং খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে।
মাথাব্যথা এবং শরীর ব্যথা -
শিশুরা মাথাব্যথা এবং পেশী ব্যথায় ভুগতে পারে।বিশেষ করে শরীরের উপরের অংশে এই ব্যথা অনুভূত হয়।
শ্বাস নিতে অসুবিধা -
শিশুদের শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।বিশেষ করে যখন তারা শারীরিক কার্যকলাপ করে।গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসের গতি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শিশুর বুকে ব্যথাও হতে পারে।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা -
মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা থাকে।খেলাধুলা বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপে তাদের আগ্রহ কমে যায়।
শিশুদের মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?
মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া সংক্রমণ সময়মত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা যেতে পারে।এর চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-বায়োটিক,বিশ্রাম এবং কিছু ঘরোয়া প্রতিকার।
অ্যান্টি-বায়োটিক চিকিৎসা -
মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়।এই সংক্রমণের জন্য অ্যান্টি-বায়োটিক ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকরা সাধারণত Azithromycin বা Clarithromycin এর মতো ওষুধের পরামর্শ দেন,যা শিশুদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
ভাপ নেওয়া -
শিশুদের শ্বাসকষ্ট এবং গলা ব্যথা কমাতে ভাপ দেওয়া যেতে পারে।ভাপ নেওয়া তাদের শ্বাসতন্ত্রে জমে থাকা শ্লেষ্মাকে আলগা করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে স্বস্তি দেয়।
বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম -
সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শিশুদের শরীরে বিশ্রাম প্রয়োজন।তাদের পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম দিলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
গলা জ্বালার জন্য গার্গল -
গলা ব্যাথা ও জ্বালা কমাতে হালকা গরম জল বা হালকা গরম লবণ জল দিয়ে গার্গল করা উপকারী হতে পারে।এটি গলা ব্যথা থেকেও মুক্তি দেয়।
জল এবং তরল পান -
শিশুদের প্রচুর জল এবং অন্যান্য তরল,যেমন- স্যুপ এবং জুস দেওয়া উচিৎ।তরল পান করা শরীরে জলশূন্যতা রোধ করে এবং কাশি থেকে মুক্তি দেয়।
এই সমস্যা এড়াতে বাইরে থেকে আসার পর শিশুর হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।এছাড়া শিশুকে নিয়মিত টিকা দিন।এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।সংক্রমণ এড়াতে,শিশুকে ভিড় জায়গায় যেতে দেবেন না।শিশুর দীর্ঘদিন ধরে কাশি বা জ্বর থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
বি.দ্র: এই বিষয়বস্তু,পরামর্শ সহ, শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদান করে।এটা কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসা মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ বা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রেসকার্ড নিউজ এর দায় স্বীকার করে না।

No comments:
Post a Comment