পারমাণবিক হামলার পর জাপান কিভাবে উন্নত হল
প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১আগস্ট: চীন, ফিলিপাইন, কোরিয়া, নিউগিনি, বার্মা এই সব দেশগুলো জাপানের দখলে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটি ভুল জাপানকে হারতে বাধ্য করেছে। আমেরিকা সেই পার্ল হারবার হামলার পর থেকে শুরু হয় জাপানের অন্ধকার সময়। যখন জাপানের দুটি শহরে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের সরাসরি মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে হার মেনে নিতে বাধ্য হয় জাপান।
তবে শেষ কিন্তু এখানে হয়নি। এই সময় জাপানের অর্থ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। খাদ্যের অভাব থেকে শুরু করে বেকারত্ব। কল কারখানা হসপিটাল যুদ্ধের জন্য প্রায় সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কোন ভাবেই জাপান আর উঠে দাঁড়ানোর মত অবস্থায় ছিল না। এমনকি পশ্চিমী দেশগুলো চাপে জাপান তাদের আর্মি নতুন করে তৈরি করতে পারেনি। কেউ ভাবতে পারেনি যে জাপান আবার উন্নত হতে পারবে।
আমেরিকার ইকোনমিস্ট মিল্টন ফ্রিডম্যান একবার বলেছিলেন, যদি কোন দেশকে তুমি দ্রুত উন্নত করতে চাও তাহলে সেই দেশে বোমাবর্ষণ কর। আর এই কথাটা যে কতটা সত্যি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হল জাপান। কারণ ১৯৪৫ সালে সেই পারমাণবিক হামলার পর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে জাপান এমন কিছু করেছিল যে জাপান হয়ে যায় পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
এমনকি আজও জাপান ফোর পয়েন্ট নাইন ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি নিয়ে সারা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে ধনী দেশের তালিকায় তিন নম্বরে আছে। এবার প্রশ্ন হল এটা কিভাবে হলো? কিভাবে জাপান ঘুরে দাঁড়িয়েছিল? আপনি জানলে অবাক হবেন, যে আমেরিকা জাপানকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল সেই আমেরিকায় আবার সাহায্য করেছিল জাপানকে উঠে দাঁড়াতে। কিন্তু আপনারা জানেন যে আমেরিকা নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পাও এগোবে না। তাহলে জাপানের মধ্যে একটা দেশ, যারা কিনা আমেরিকার উপর হামলা করেছিল সেই আমেরিকা কেন জাপানের সাহায্য করতে এগিয়ে আসলো। আমেরিকার আসল স্বার্থ কি ছিল? আর জাপান কেনই বা তাদের উপর হওয়া পারমাণবিক হামলা কখনো বদলা নেওয়ার চেষ্টা করেনি?
হিরোশিমা নাগাসাকি পারমাণবিক হামলার পর জাপান বুঝে গিয়েছিল এই যুদ্ধে তাদের হার নিশ্চিত। ১৯৪৫ সালে ১৫ই আগস্ট জাপান মিত্র পক্ষ অর্থাৎ আমেরিকা, ব্রিটেন ও সবীয়েত ইউনিয়নের সামনে আত্মসমর্পণ করে। আর জাপানের সম্পূর্ণ দখল চলে আসে আমেরিকার হাতে। এই ৬ বছর ধরে চলা যুদ্ধে জাপানের প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি নষ্ট হয়। সেই সময় জাপানের সাধারণ মানুষ খুব দুর্দশার মধ্যে ছিল। একে তো হিরোশিমার নাগাসাকি মত বড় বড় দুটো শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এদিকে টোকিও সহ বাকি শহর গুলোর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। জাপানের সাধারণ মানুষের কাছে না ছিল রোজগার না ছিল খাদ্য। দিন দিন জাপান একটা মৃত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। যখন কোন দেশ বা রাজ্য যুদ্ধে হেরে যায় তখন সেই দেশের সাধারণ মানুষ বা অর্থনীতির কথা কেউ ভাবে না। আমেরিকা সহ মিত্র দেশগুলো কিন্তু জাপানের কথা ভাবেনি। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জাপানের সাথে এমন কিছু করা যাতে জাপান আর কখনো যুদ্ধ করতে না পারে। জাপানকে একদম কমজোরি করে দেওয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারের পর জার্মানির উপর অনেক পরিমাণ ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বিশ্বব্যাপী জার্মানিদেরকে অনেক অপমান করা হয়েছিল। যে অপমানের বদলা নিতে জার্মানি আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিল।
এই একই ঘটনা যাতে জাপানের সাথে না হয় এই বিষয় নিয়ে মিত্র পক্ষ চিন্তায় ছিল। তাই জাপানের এই আত্মসমর্পণ এবং ভবিষ্যতে জাপানের সাথে কি করা হবে সেগুলো সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল জেনারেল ডগলাস ম্যাক আখতারের উপর। এই ডগলাসের নির্দেশে প্রথম একটা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইবুনাল তৈরি করা হয়।
যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধী ছিল তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। জাপানের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তেজো সহ আরো প্রায় 6 জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। জাপানের রাজতন্ত্রকে ভেঙে ফেলা হয়। জাপানে নিয়ে আসা হয় গণতন্ত্র। যাতে দেশের জনগণ নিজেদের পছন্দমত প্রার্থীকে বেছে নিতে পারে শাসন চালানোর জন্য। এমনকি নতুন করে জাপানের সংবিধান লেখা হয়। এই সংবিধানের আর্টিকেল নয়ে উল্লেখ করা হয়, জাপান কখনো যুদ্ধের জন্য সৈন্যবাহিনী তৈরি করতে পারবে না। এছাড়া জাপানের সমস্ত গোলাবারুদ তৈরির কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর যুদ্ধের সময় উঁচু পদে থাকার সমস্ত ব্যক্তিদের তাদের পথ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এইতো গেল জাপানের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া। কিন্তু ঠিক একই মুহূর্তে জাপানের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। দেশের এক্সপোর্ট একেবারে শূন্যের কাছে এসে পৌঁছায়।
এই একই ঘটনা যাতে জাপানের সাথে না হয় এই বিষয় নিয়ে মিত্র পক্ষ চিন্তায় ছিল। তাই জাপানের এই আত্মসমর্পণ এবং ভবিষ্যতে জাপানের সাথে কি করা হবে সেগুলো সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল জেনারেল ডগলাস ম্যাক আখতারের উপর। এই ডগলাসের নির্দেশে প্রথম একটা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইবুনাল তৈরি করা হয়।
যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধী ছিল তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। জাপানের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তেজো সহ আরো প্রায় 6 জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। জাপানের রাজতন্ত্রকে ভেঙে ফেলা হয়। জাপানে নিয়ে আসা হয় গণতন্ত্র। যাতে দেশের জনগণ নিজেদের পছন্দমত প্রার্থীকে বেছে নিতে পারে শাসন চালানোর জন্য। এমনকি নতুন করে জাপানের সংবিধান লেখা হয়। এই সংবিধানের আর্টিকেল নয়ে উল্লেখ করা হয়, জাপান কখনো যুদ্ধের জন্য সৈন্যবাহিনী তৈরি করতে পারবে না। এছাড়া জাপানের সমস্ত গোলাবারুদ তৈরির কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর যুদ্ধের সময় উঁচু পদে থাকার সমস্ত ব্যক্তিদের তাদের পথ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এইতো গেল জাপানের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া। কিন্তু ঠিক একই মুহূর্তে জাপানের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। দেশের এক্সপোর্ট একেবারে শূন্যের কাছে এসে পৌঁছায়।
১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে জাপানের জিডিপি ছিল মাত্র দশ বিলিয়ন ডলার। আর এই জিডিপি গ্রোথ প্রতি বছর নেগেটিভ হচ্ছিল। এই সময় কিন্তু আমেরিকা বা অন্যান্য মৃত্যু দেশগুলো জাপানের অর্থনীতি নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছিল না। তারা জাপানকে সেই খারাপ অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছে। সবাই যখন জাপানের উপর থেকে আশা ছেড়ে দিয়েছিল ঠিক সেই সময় আমেরিকা আবার জাপানের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে তুলতে শুরু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে কোল্ডোয়া শুরু হয়। রাশিয়া তখন চাইছিল সারা বিশ্বের কমিউনিজম ছড়াতে। অন্যদিকে আমেরিকা চাইছে ক্যাপিটাল রিলিজন এবং ডেমোক্রেসি কে প্রমোট করতে। দ্বীতীয় বিশ্ব যুদ্ধেরপর আমেরিকার লক্ষ্য করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ধীরে ধীরে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে কমিউনিজমের বিস্তার করছে। চীনে ততদিনে মাওজীডনের কমিউনিস্ট শাসন শুরু হয়ে যায়। কুরিয়ায় কমিউনিস্ট চিন্তাধারা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আমেরিকা দেখে যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে প্যাসিফিক রিজনে কোন এলাই থাকবে না। তাই আমিরিকা চাচ্ছিল এই প্যাসিফিক রিজেন একটা শক্তিশালী মিত্র দেশ। আর তারা সেই সময় ফোকাস করে জাপানের উপরে। তারা জাপানকে এতটা উন্নত করতে চেয়েছিল যাতে জাপান ডেমোক্রেসির একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং প্যাসিফিক রিজনে কমিউনিস্টের যে বিস্তার হচ্ছে তার সামনে একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ সাল এই চার বছরের মধ্যে জাপানের ইন্ডাস্ট্রি এতটা গ্রো করে যেমনটা জাপান ১৯৩৭ সালের যুদ্ধের আগে ছিল। এই সময় দেশের রোজগার বাড়তে থাকে। সাথে জাপানিদের জীবন যাত্রার উন্নতি হয়।

No comments:
Post a Comment